পূর্বে এ অঞ্চল ত্রিপুরা নামে পরিচিত ছিল। ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা গঠনের মাধ্যমে ত্রিপুরা কালেক্টরেটের যাত্রা শুরু হয়। ১৭৯৩ সালে ত্রিপুরা জেলার জন্য একজন দেওয়ানি জজ নিযুক্ত করা হয় এবং সে বছরই তাকে ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা দেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা।১৯৮৪সালেউপজেলাপদ্ধতি চালুহলেএকটিগুরুত্বপূর্ণপ্রশাসিনকইউনিটহিসেবেআদর্শসদরউপজেলাসরকারীউন্নয়নপরিকল্পনাবাস্তবায়নপূর্বকজনগনেরআর্থ-সামাজিকউন্নয়নেভূমিকারেখেচলেছে।পরবর্তীতে২০০৫ সালে এ উপজেলার দক্ষিণ ভাগের কিছু অংশ নিয়ে সদর দক্ষিণ নামে একটি নতুন উপজেলা সৃষ্টি করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে এ উপজেলার সম্পৃক্ততার ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ। ১৭৬৪ সালে সমশের গাজীর নেতৃত্বে সংঘটিত ত্রিপুরার রাজাদের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন কুমিল্লার ইতিহাসে উজ্জ্বল ঘটনা। প্রিন্স ওয়ালেসের ভারত ভ্রমণের প্রতিবাদে ২১ শে নভেম্বর ১৯২১ সালে দেশব্যাপী আহুত ধর্মঘটে এ উপজেলাবাসী সক্রিয় অংশ গ্রহণ করে। সে সময় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামএ শহরেঅবস্থান করছিলেন এবং তিনি বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা লিখে কুমিল্লার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। গান্ধী অভয়াশ্রম নামের প্রতিষ্ঠানটি এসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আদর্শ সদর উপজেলারজনগণ সক্রিয়অংশগ্রহণ করেছে।উপজেলারকয়েকটি স্থানে গণহত্যা সংঘটিত হয় যেমন কোটেস্বর,রসুলপুরইত্যাদি ।
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী অতীতের সাক্ষ্য বহন করছে এখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনসমূহ। এ উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে বহু মূল্যবান পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক স্থানের সন্ধান পাওয়া গেছে। তেমনি এক ঐতিহাসিক স্থানের সন্ধান পাওয়া যায় লালমাই ময়নামতি পাহাড়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে। এখনকার মাটি খুঁড়ে প্রাচীন সভ্যতার চিহ্ন খুজেঁ পাওয়া গেছে। এ পাহাড়ের পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে শালবন বিহারকুটিলা মুড়া, চন্দ্রামুড়া, রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, সতের রত্নমুড়া, রাণীর বাংলোর পাহাড়, আনন্দবাজারের প্রাসাদসমূহ, চন্ডীমুড়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব স্থান হতে উদ্ধারকৃত প্রত্নসম্পদ যেমন মূর্তি, ধাতব তৈজসপত্র ও অন্যান্য নিদর্শনসমূহ বর্তমানে ময়নামতি জাদুঘরে রক্ষিত আছে। অন্যান্য ঐতিহাসিক নির্দশনের মধ্যে শাহ সুজা মসজিদ,রানীরকুঠিকুমিল্লার প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকরেছ। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবনের বেশ কিছু সময় এ উপেজলায়বসবাস করেছেন। তাঁর স্ত্রী প্রমিলা দেবী এ উপজেলারঅধিবাসী ছিলেন। উপমহাদেশেরবিখ্যাতসংগীতশিল্পীসচিনদেববর্মণজীবনেরএকটিউল্লেখযোগ্যসময়সংগীতসাধনাকরেছেনএউপজেলায়থেকে ।সচিনদেববর্মণেরপুরাতনবাড়ীটিপ্রত্নত্বাত্তিকনিদর্শনহিসেবেপর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় স্থান ।এছাড়াওদেশবিখ্যাত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং কুমিল্লা জেলা স্কুল এখানকার সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
গোমতীর তীরে অবস্থিত এ উপজেলায়বেশ কয়েকটি বিখ্যাত জলাশয় রয়েছে। যেমন: ধর্মসাগর, রানীর দীঘি, নানুয়ার দীঘি, উজির দীঘি ইত্যাদি। এ উপজেলায়বহু মনীষী জন্মগ্রহণ করেছেন যারা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তজার্তিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। নবাব সিরাজুল ইসলাম, হরদয়াল নাগ, মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, নবাব স্যার সামশুল হুদা, রায় বাহাদুর অমিন্দচন্দ্র রায়, সৈয়দ আবদুল জব্বার, বসন্ত কুমার মজুমদার, ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, শচীন দেব বর্মন, এম এ আযম প্রমুখের সমাজসেবা, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবদানের কথা কুমিল্লাবাসী কখনও ভুলবেনা। ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন, ফজলে নিজামি এবং ফুলেন্দু দাস কুমিল্লার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। এছাড়া বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ডঃ আখতার হামিদ খান তার উদ্ভাবিত কুমিল্লা মডেল এ উপজেলা থেকেই শুরু করেন এবং এর সফল ব্যবহারের মাধ্যমে আর্ন্তজাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেন। কুমিল্লার খদ্দর সারাদেশে সুখ্যাতিঅর্জন করেছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস